ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ::
কখনো পি আর কখনো গণভোট সহ নানান অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা। ফরহাদ হোসেন আজাদ জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা তলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে – যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিব বিএডিসি বীজ ডিলারদের সার ডিলার হিসেবে নিবন্ধনের দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান পার্বতীপুরে ব্যারিস্টার এ কে এম  কামরুজ্জামান সমর্থিত উপজেলা যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  এস্কাফ ও গাঁজাসহ মশিউর রহমান (২২) নামে ১জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৩ নারী শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি চলবেনা – রাকসু ভিপি জাহিদ দলীয় পদ ফিরে পেলেন সৈয়দপুরের সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান লায়ন্স ক্লাবের সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে সৈয়দপুরে সড়ক অবরোধ  রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত: অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে গরুশূন্য গোয়াল, ছোট খামারিদের বড় ক্ষতি পঞ্চগড়ে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বর্নাঢ্য র‍্যালি
সংবাদ শিরোনাম ::
কখনো পি আর কখনো গণভোট সহ নানান অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা। ফরহাদ হোসেন আজাদ জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা তলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে – যুবদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিব বিএডিসি বীজ ডিলারদের সার ডিলার হিসেবে নিবন্ধনের দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান বাঘায় যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন পার্বতীপুরে ব্যারিস্টার এ কে এম  কামরুজ্জামান সমর্থিত উপজেলা যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে ২৮ অক্টোবর পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত শেরপুরে পরকীয়া সন্দেহে ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন প্রকৃতি আর অব্যবস্থাপনায় চরম দুর্ভোগে আখচাষীরা এস্কাফ ও গাঁজাসহ মশিউর রহমান (২২) নামে ১জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৩ কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক পল্টন ট্রাজেডি উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতীয় (কীটনাশক) বিষেই শেষ হতে চলেছে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি। বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা ম্যানগ্রোভ এই বনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার থামছেনা। এখন তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু পূব সুন্দরবন বিভাগেই গত চার মাসে বিভিন্ন অভিযানে জেলেদের আটকসহ বিষের বোতল ও বিষ দিয়ে আহরণ করা বিপুল পরিমাণ মাছ জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, এক শ্রেনীর জেলে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ফলে শেষ হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ৮০০ জেলে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের অনুমোদিত নদীখালে পাশ-পারমিট নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করে থাকে। সুন্দরবনের নদীখালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ সস্পূর্ন নিষিদ্ধ হলেও দাদনের জালে আটকে থাকা অধিকাংশ জেলেরা লোকালয়ে তাদের মহাজন ও আড়তদারদের সরবরাহকৃত ভারতীয় বিষ খালের পানিতে ছড়িয়ে দিয়ে মাছ আহরণ করে থাকে। নিষিদ্ধ ভারতীয় (কীটনাশক) সহজলভ্য হওযায় ওই বিষ ব্যবহার করে সুন্দরবনে মাছ মারা হচ্ছে।
মহাজন ও দাদনদারদের চাপেই দরিদ্র জেলেরা অনিচ্ছাসত্তে¡ও অধিক মাছ প্রাপ্তির আসায় বিষ দিয়ে মাছ ধরে। এতে করে শেষ হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাসে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে এলাকায় আড়াই শত অভিযানে ১৩২জন অপরাধীকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। জেলেদের কাছ থেকে এসময় জব্দ করা হয়েছে ৪৫ বিষ ভর্তি বোতল, ৪ কেজি বিষ পাউডার (যার প্রায় প্রতিটিতেই মেড ইন ইন্ডিয়া লেখা), ৬৫৭ কেজি বিষযুক্ত মাছ। বিষ দিয়ে ধরা ২২ বস্তা শুটকি মাছ, ৩৭৫ কেজি কাঁকড়া, ২৪২টি ট্রলার ও নৌকা, প্রায় ২০ হাজার ফুট মাছ ধরা জাল।
মোংলার উপজেলার জয়মনি এলাকার রনজিৎ মন্ডল নামে এক জেলে জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর বেশির ভাগ জেলে মহাজনের দাদনের জালে আটকানো। অনেক সময় বাধ্য হয়েই তারা বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে। মহাজনরা বিভিন্ন ডিলারের কাছ থেকে ভারতীয় কিটনাশক এনে দেয়, কিছু খুলনা থেকেও আনা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার হয়ে পড়া বা ঋণে জর্জরিত জেলেরা পেটের দায়ে এই পথে নামতে বাধ্য হয়। বিষ দিয়ে ধরা মাছ বা চিংড়ি সরাসরি বাজারে আনা হয় না। বনেই গাছ কেটে মাচা বানিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকি শুকাতে সুন্দরীগাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়, এতে শুঁটকির রং লালচে হয় এবং দামও বেশি পাওয়া যায়।
শরণখোলা উপজেলার গাবতলা গ্রামের জেলে আ. সাত্তার বলেন, প্রকৃত জেলেরা কখনোই সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে না। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। তাদের পেছনে থাকে মহাজনরা। মহাজনরা দাদন দিয়ে জেলেদের ফাঁদে ফেলে এবং নিজেরাই ভারতীয় কিটনাশক সরবরাহ করে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরলে অনেক সময় আমাদের আটক হয়ে কারাগারে যেতে হয়। তবে, বিষ সরবরাহকারি মহাজনরা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।
সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বিষ দিয়ে মাছ শিকার শুধু সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদই নয়, বনের পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের শ্বাষমূলও চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বিষ দিয়ে আহরণ করা মাছ খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। মূলত মহাজন ও আড়তদারদের চাপে জেলেরা এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সুন্দরবন বিভাগের কাছে আহরিত মাছে বিষ আছে কি না তা সনাক্তের কোন কিট না থাকায় অধিকাংশ সময়ই জেলেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় আহরিত মাছে বিষ সনাক্ত করতে বন অধিদপ্তরের কাছে দ্রæত কিট সরবরাহের দাবি জানান এই পরিবেশবিদ।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরা ঠেকাতে আমরা ইতোমধ্যে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছি। এতে হরিণ শিকারীদের কার্যক্রম কমে এসেছে। তবে বিষ দিয়ে মাছ ধরা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিষিদ্ধ ভারতীয় কীটনাশকে সয়লাভ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবন। গত চার মাসে আটক জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় সব বিষের বোতলই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’।
সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে সয়লাভ হয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ এই বিষ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কৃষি বিভাগের। ইতিমধ্যে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কীটনাশক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায়। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা পেলে সুন্দরবনকে বিষদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিষসহ আটক জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। বিষ সরবরাহকানি আড়তদার ও মহাজনদের চিহ্নিত করে ব্যাবস্থা নেয়া গেলেই বিষ দিয়ে মাছ শিকারও হ্রাস পাবে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা ও শরণখোলা উপজেলা এলাকায় কীটনাশক বিক্রি করা ডিলারদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ দুই উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৪০ জন কীটনাশক বিক্রেতা রয়েছে। যেসব ডিলার অবৈধ পথে ভারতীয় কীটনাশক আমদানি করছে এবং বাড়িতে মজুত করছে সুন্দবনের জেলে, আড়তদার ও মহাজনদের কাছে বিক্রি করছে তাদের সনাক্ত করে কীটনাশকের লাইসেন্স বাতল করা হবে। এবিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

মোঃ কামরুল ইসলাম টিটু
বাগেরহাট শরনখোলা
তারিখ:২৮-১০-২০২৫

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : ০৬:৩৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

ভারতীয় (কীটনাশক) বিষেই শেষ হতে চলেছে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি। বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা ম্যানগ্রোভ এই বনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার থামছেনা। এখন তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধু পূব সুন্দরবন বিভাগেই গত চার মাসে বিভিন্ন অভিযানে জেলেদের আটকসহ বিষের বোতল ও বিষ দিয়ে আহরণ করা বিপুল পরিমাণ মাছ জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, এক শ্রেনীর জেলে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ফলে শেষ হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ৮০০ জেলে সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের অনুমোদিত নদীখালে পাশ-পারমিট নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করে থাকে। সুন্দরবনের নদীখালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ সস্পূর্ন নিষিদ্ধ হলেও দাদনের জালে আটকে থাকা অধিকাংশ জেলেরা লোকালয়ে তাদের মহাজন ও আড়তদারদের সরবরাহকৃত ভারতীয় বিষ খালের পানিতে ছড়িয়ে দিয়ে মাছ আহরণ করে থাকে। নিষিদ্ধ ভারতীয় (কীটনাশক) সহজলভ্য হওযায় ওই বিষ ব্যবহার করে সুন্দরবনে মাছ মারা হচ্ছে।
মহাজন ও দাদনদারদের চাপেই দরিদ্র জেলেরা অনিচ্ছাসত্তে¡ও অধিক মাছ প্রাপ্তির আসায় বিষ দিয়ে মাছ ধরে। এতে করে শেষ হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাসে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে এলাকায় আড়াই শত অভিযানে ১৩২জন অপরাধীকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। জেলেদের কাছ থেকে এসময় জব্দ করা হয়েছে ৪৫ বিষ ভর্তি বোতল, ৪ কেজি বিষ পাউডার (যার প্রায় প্রতিটিতেই মেড ইন ইন্ডিয়া লেখা), ৬৫৭ কেজি বিষযুক্ত মাছ। বিষ দিয়ে ধরা ২২ বস্তা শুটকি মাছ, ৩৭৫ কেজি কাঁকড়া, ২৪২টি ট্রলার ও নৌকা, প্রায় ২০ হাজার ফুট মাছ ধরা জাল।
মোংলার উপজেলার জয়মনি এলাকার রনজিৎ মন্ডল নামে এক জেলে জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর বেশির ভাগ জেলে মহাজনের দাদনের জালে আটকানো। অনেক সময় বাধ্য হয়েই তারা বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে। মহাজনরা বিভিন্ন ডিলারের কাছ থেকে ভারতীয় কিটনাশক এনে দেয়, কিছু খুলনা থেকেও আনা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার হয়ে পড়া বা ঋণে জর্জরিত জেলেরা পেটের দায়ে এই পথে নামতে বাধ্য হয়। বিষ দিয়ে ধরা মাছ বা চিংড়ি সরাসরি বাজারে আনা হয় না। বনেই গাছ কেটে মাচা বানিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকি শুকাতে সুন্দরীগাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়, এতে শুঁটকির রং লালচে হয় এবং দামও বেশি পাওয়া যায়।
শরণখোলা উপজেলার গাবতলা গ্রামের জেলে আ. সাত্তার বলেন, প্রকৃত জেলেরা কখনোই সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে না। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। তাদের পেছনে থাকে মহাজনরা। মহাজনরা দাদন দিয়ে জেলেদের ফাঁদে ফেলে এবং নিজেরাই ভারতীয় কিটনাশক সরবরাহ করে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরলে অনেক সময় আমাদের আটক হয়ে কারাগারে যেতে হয়। তবে, বিষ সরবরাহকারি মহাজনরা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।
সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বিষ দিয়ে মাছ শিকার শুধু সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদই নয়, বনের পানি ভয়াবহভাবে দূষিত হয়ে ডলফিনসহ জলজপ্রাণীসহ পাখি ও বন্যপ্রাণী ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের শ্বাষমূলও চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বিষ দিয়ে আহরণ করা মাছ খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। মূলত মহাজন ও আড়তদারদের চাপে জেলেরা এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সুন্দরবন বিভাগের কাছে আহরিত মাছে বিষ আছে কি না তা সনাক্তের কোন কিট না থাকায় অধিকাংশ সময়ই জেলেরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় আহরিত মাছে বিষ সনাক্ত করতে বন অধিদপ্তরের কাছে দ্রæত কিট সরবরাহের দাবি জানান এই পরিবেশবিদ।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরা ঠেকাতে আমরা ইতোমধ্যে ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছি। এতে হরিণ শিকারীদের কার্যক্রম কমে এসেছে। তবে বিষ দিয়ে মাছ ধরা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিষিদ্ধ ভারতীয় কীটনাশকে সয়লাভ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবন। গত চার মাসে আটক জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় সব বিষের বোতলই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’।
সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে সয়লাভ হয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ এই বিষ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কৃষি বিভাগের। ইতিমধ্যে আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কীটনাশক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায়। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা পেলে সুন্দরবনকে বিষদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিষসহ আটক জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। বিষ সরবরাহকানি আড়তদার ও মহাজনদের চিহ্নিত করে ব্যাবস্থা নেয়া গেলেই বিষ দিয়ে মাছ শিকারও হ্রাস পাবে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা ও শরণখোলা উপজেলা এলাকায় কীটনাশক বিক্রি করা ডিলারদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ দুই উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৪০ জন কীটনাশক বিক্রেতা রয়েছে। যেসব ডিলার অবৈধ পথে ভারতীয় কীটনাশক আমদানি করছে এবং বাড়িতে মজুত করছে সুন্দবনের জেলে, আড়তদার ও মহাজনদের কাছে বিক্রি করছে তাদের সনাক্ত করে কীটনাশকের লাইসেন্স বাতল করা হবে। এবিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

মোঃ কামরুল ইসলাম টিটু
বাগেরহাট শরনখোলা
তারিখ:২৮-১০-২০২৫