শীতের আগমনে বাঘায় খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

- আপডেট সময় : ০৫:৫২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ২৭ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই খেজুর গাছকে ঘিরেই শুরু হয় গ্রামীণ জীবনের শীতকালীন উৎসব।
শীতকাল এলেই অযত্নে বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায় কয়েকগুণ। খেজুর গাছ অন্য কোনো ফসলের ক্ষতি করে না, আবার এর জন্য আলাদা কোনো খরচও করতে হয় না। ঝোপঝাড়ে, জমির আইলে কিংবা বাড়ির আঙিনায় বেড়ে ওঠা এসব গাছে শুধু মৌসুম এলেই নিয়মিত পরিষ্কার করে রস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এই রস থেকেই তৈরি হয় মিষ্টি গুড়, যার ঘ্রাণে ম-ম করে ওঠে পুরো এলাকা।
গ্রামীণ জনজীবনে খেজুরের রস ও গুড়কে ঘিরে জমে ওঠে নিত্য উৎসবের আমেজ। পিঠা-পায়েস, পুলি, মণ্ডা থেকে শুরু করে নানা সুস্বাদু খাবারে ব্যবহৃত হয় খেজুরের গুড়। শীতের সকালে বাড়ির আঙিনায় বসে রৌদ্রে রস আর মুড়ি খাওয়ার আসর—এই ঐতিহ্য গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য আনন্দ উৎসব।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাঘা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা এলাকায় সড়ক ও রেলপথের ধারে, জমির আইলে এবং বাড়ির আঙিনায় প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ৮শ’ মেট্রিকটন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন গাছি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন এবং শীতকালীন মৌসুমে (প্রায় ১৩০ দিনে) প্রতি গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত গুড় উৎপাদন সম্ভব হয়। খেজুরের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি হয়, আর ডালপালা ব্যবহৃত হয় জ্বালানি হিসেবে।
পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের গাছি লূৎফর জানান, “প্রথম দিকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করি, কিন্তু মৌসুমের মধ্যভাগে ৫০ থেকে ৬০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি।”
বাঘা পৌরসভার আড়পাড়া গ্রামের গাছি ইসহাক মিয়া বলেন, “প্রতিদিন ৩৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে ১৬ থেকে ২০ কেজি গুড় তৈরি করি।”
সড়কঘাট গ্রামের গাছি সান্টু জানান, “৩০ থেকে ৪০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। সংসারের চাহিদা মিটিয়ে বাকি গুড় বিক্রি করি বাজারে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে গুড়ের বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খেজুর গাছের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা তাদের খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এতে একদিকে রস ও গুড়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে, অন্যদিকে পরিবারে আসবে আর্থিক সচ্ছলতা।