ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ::
এস্কাফ ও গাঁজাসহ মশিউর রহমান (২২) নামে ১জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৩ নারী শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি চলবেনা – রাকসু ভিপি জাহিদ দলীয় পদ ফিরে পেলেন সৈয়দপুরের সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান লায়ন্স ক্লাবের সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে সৈয়দপুরে সড়ক অবরোধ  রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত: অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে গরুশূন্য গোয়াল, ছোট খামারিদের বড় ক্ষতি পঞ্চগড়ে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বর্নাঢ্য র‍্যালি পঞ্চগড়ের বোদায় বিপন্ন প্রাণী বনরুই উদ্ধার ইসকন নিয়ে বক্তব্য দেয়ায় খতিবকে আ.লীগ নেতার হুমকি আটোয়ারী আলোয়াখোয়া রাশ মেলা -প্রস্তুতিমূলক সভা পঞ্চগড়ে দেশীয় পিস্তল-গুলি ও ফেন্সিডিল জব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এস্কাফ ও গাঁজাসহ মশিউর রহমান (২২) নামে ১জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৩ কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক পল্টন ট্রাজেডি উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনে ইউপিডিএফের বাঁধার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে পিসিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন উওরন অ্যাক্সেস প্রকল্পের সহায়তায় : সবজির বীজ ও ভার্মিকম্পোস্ট সার বিতরন কুলিয়ারচরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভা নারী শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি চলবেনা – রাকসু ভিপি জাহিদ দলীয় পদ ফিরে পেলেন সৈয়দপুরের সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান সলঙ্গা দিগর নূরানী মাদ্রাসায় কোরআন সবক প্রদান রাজশাহীতে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেত্রী ফাইজা গ্রেপ্তার

রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত: অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে গরুশূন্য গোয়াল, ছোট খামারিদের বড় ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার রংপুর
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে আর গরু নেই। গরু রাখার ঘরও সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছেন তিনি।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আনন্দী ধনীরাম গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম (৬৫)। বাড়িতে দুটি গরু ছিল। গত সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে চার মাসের গাভিন শাহিওয়াল জাতের গরুটি মারা যায়। অন্য গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করতে হয়। এর পর থেকে তাঁর গোয়ালঘর গরুশূন্য। সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছেন জরাজীর্ণ সেই গোয়ালও।

২৮ অক্টোবর তাঁর বাড়িতে গেলে সিরাজুল বলেন, শূন্য গোয়াল রেখে কী করবেন? তাঁর কিছুই নেই করে খাওয়ার মতন। যদি বাঁশ-টিন-কাঠ বিক্রি করে ৫ কেজি চাল আনতে পারেন, তাহলে ৫ দিন যাবে। এর পরের খোরাকি তিনি কোথায় পাবেন?

অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে শুধু সিরাজুলের গরু মারা যায়নি, তাঁদের পরিবারেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংক্রমিত গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার পর পরিবারের ৪–৫ জনসহ ওই এলাকার ২০–২৫ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। সিরাজুলের ভাবি কমেলা বেগম (৭০) মাংস কাটার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। সিরাজুলও অসুস্থ ছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় অন্তত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সপ্তাহ থেকে পীরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটার সঙ্গে যুক্ত ৯ জন আক্রান্ত হন। রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে এই রোগে কমেলা বেগম ছাড়াও আবদুর রাজ্জাক নামের ১ ভ্যানচালক মারা যান। গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছার কয়েকটি ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় শতাধিক গরু–ছাগল মারা গেছে।

আনন্দী ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে এই গ্রামের রইস উদ্দিন, রমজান আলী, রফিকুল ইসলামসহ ছয়জনের সাতটি গরু এবং আরও তিনজনের আটটি ছাগল মারা গেছে। এই ব্যক্তিরা কেউ দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন, কেউ বছর শেষে গরু বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাতেন।

সিরাজুল ইসলামের পাশের বাড়ির রমজান আলী ও তাঁর ছোট ভাইয়ের বাড়িতেও শূন্য গোয়াল দেখা গেছে। রমজান আলী বলেন, ‘দিনমজুরি দিয়া খাই। দুই-একটা গাভি পুষি চলতাম। তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) রোগের ভয়ে চারটি গরু বিক্রি করে দিছি। আমারও একটা গরু মারা গেছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, রংপুরের ৪ উপজেলার ৩১ খামারির ১১৩টি সন্দেহভাজন গবাদিপশুর মধ্যে ৫০টি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। ১৯টি মারা গেছে, ৩০টি জবাই করা হয় এবং একটি চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত আট উপজেলায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭০০ গরুকে অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম চলছে।

পীরগাছার কুটিপাড়ার বাসিন্দা আবু তাহের ও আবু তালেব ২ ভাই হাটে পুরোনো কাপড় বিক্রির পাশাপাশি বাড়িতে গরুর খামার করেছেন। অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে তাঁদের ৪টি গাভি মারা গেছে। আবু তাহের বলেন, ‘নিঃস্ব হইছি। সরকারের কেউ দেখতে আসল না।’ তিনি জানান, তাঁর বাড়ির আশপাশে সাতটি গরু মারা গেছে। ছাগল মারা গেছে চারটি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু ছাঈদ জানান, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে গবাদিপশুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। তবে তাঁরা ছোট খামারিদের ক্ষতি পোষাতে নানাভাবে সহযোগিতার কথা ভাবছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত: অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে গরুশূন্য গোয়াল, ছোট খামারিদের বড় ক্ষতি

আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে আর গরু নেই। গরু রাখার ঘরও সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছেন তিনি।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আনন্দী ধনীরাম গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম (৬৫)। বাড়িতে দুটি গরু ছিল। গত সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে চার মাসের গাভিন শাহিওয়াল জাতের গরুটি মারা যায়। অন্য গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করতে হয়। এর পর থেকে তাঁর গোয়ালঘর গরুশূন্য। সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছেন জরাজীর্ণ সেই গোয়ালও।

২৮ অক্টোবর তাঁর বাড়িতে গেলে সিরাজুল বলেন, শূন্য গোয়াল রেখে কী করবেন? তাঁর কিছুই নেই করে খাওয়ার মতন। যদি বাঁশ-টিন-কাঠ বিক্রি করে ৫ কেজি চাল আনতে পারেন, তাহলে ৫ দিন যাবে। এর পরের খোরাকি তিনি কোথায় পাবেন?

অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে শুধু সিরাজুলের গরু মারা যায়নি, তাঁদের পরিবারেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংক্রমিত গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার পর পরিবারের ৪–৫ জনসহ ওই এলাকার ২০–২৫ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। সিরাজুলের ভাবি কমেলা বেগম (৭০) মাংস কাটার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। সিরাজুলও অসুস্থ ছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় অন্তত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সপ্তাহ থেকে পীরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটার সঙ্গে যুক্ত ৯ জন আক্রান্ত হন। রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে এই রোগে কমেলা বেগম ছাড়াও আবদুর রাজ্জাক নামের ১ ভ্যানচালক মারা যান। গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছার কয়েকটি ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় শতাধিক গরু–ছাগল মারা গেছে।

আনন্দী ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে এই গ্রামের রইস উদ্দিন, রমজান আলী, রফিকুল ইসলামসহ ছয়জনের সাতটি গরু এবং আরও তিনজনের আটটি ছাগল মারা গেছে। এই ব্যক্তিরা কেউ দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন, কেউ বছর শেষে গরু বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাতেন।

সিরাজুল ইসলামের পাশের বাড়ির রমজান আলী ও তাঁর ছোট ভাইয়ের বাড়িতেও শূন্য গোয়াল দেখা গেছে। রমজান আলী বলেন, ‘দিনমজুরি দিয়া খাই। দুই-একটা গাভি পুষি চলতাম। তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) রোগের ভয়ে চারটি গরু বিক্রি করে দিছি। আমারও একটা গরু মারা গেছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, রংপুরের ৪ উপজেলার ৩১ খামারির ১১৩টি সন্দেহভাজন গবাদিপশুর মধ্যে ৫০টি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। ১৯টি মারা গেছে, ৩০টি জবাই করা হয় এবং একটি চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত আট উপজেলায় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭০০ গরুকে অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম চলছে।

পীরগাছার কুটিপাড়ার বাসিন্দা আবু তাহের ও আবু তালেব ২ ভাই হাটে পুরোনো কাপড় বিক্রির পাশাপাশি বাড়িতে গরুর খামার করেছেন। অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে তাঁদের ৪টি গাভি মারা গেছে। আবু তাহের বলেন, ‘নিঃস্ব হইছি। সরকারের কেউ দেখতে আসল না।’ তিনি জানান, তাঁর বাড়ির আশপাশে সাতটি গরু মারা গেছে। ছাগল মারা গেছে চারটি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু ছাঈদ জানান, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে গবাদিপশুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। তবে তাঁরা ছোট খামারিদের ক্ষতি পোষাতে নানাভাবে সহযোগিতার কথা ভাবছেন।